মঙ্গলবার বহুল প্রতীক্ষিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়ায় ডিসিদের দায়িত্বও বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে ডিসিদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে ডিসিদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং সরকারি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের কল্যাণে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করতে হবে ডিসিদের।
প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের উদ্দেশে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। ডিসি হচ্ছেন প্রজাতন্ত্রের এমন এক কর্মচারী, যিনি একটি জেলার প্রধান পুরুষ হিসাবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। তাকে আবর্তিত করেই পরিচালিত হয় জেলার প্রশাসন যন্ত্র। জেলার সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন অনেকটাই নির্ভর করে তার কর্মপদ্ধতির ওপর।
সুতরাং একজন ডিসিকে অবশ্যই গণমুখী চরিত্র ধারণ করতে হবে। প্রশাসনের কাছে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী সে কথারই পুনরুল্লেখ করেছেন। ডিসিদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ কোনো ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা শাসিত রাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র।
এখানে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার। সুতরাং গণমানুষের দেখভাল করাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে। এক কথায়-শাসক নয়, ডিসিদের সেবকের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের আচরণবিধি সম্পর্কে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তারা।
ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও অনেক কথা বলেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা যাতে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন, সেদিকে ডিসিদের খেয়াল রাখার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেছেন, তিনি দেখতে চান না কোনো শহিদ পরিবার ভিক্ষা করুক। এটা স্বীকার না করে উপায় নেই, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি। সুতরাং মুক্তিযুুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের ঘাড়ে এক বড় দায়িত্ব বর্তায়।
আর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে ডিসিদের। কারণ তারাই জানেন, তাদের সংশ্লিষ্ট জেলায় শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলো কেমন অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন সমন্বিতভাবে গ্রহণ করা হয়, সেই নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, চলমান প্রকল্পগুলোয় কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, তা তদারকের দায়িত্বও পালন করতে হবে ডিসিদের। এ
টা বলার অপেক্ষা রাখে না, সমাজের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে, সেগুলোও দুর্নীতিমুক্ত নয়। ডিসিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধে তা এক বড় ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই। সবশেষে বলতে হয়, ৬৪ জেলার সব ডিসিই যদি দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে দেশের উন্নয়নের গতি আরও বেগবান হবে অবশ্যই।